জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনের আলোচনা নিয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে ‘অতি দ্রুত’ একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কোনও কালক্ষেপণ না করেই মুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসময় সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, আপনি ও দেশের সশস্ত্র বাহিনী দেশের সর্বস্তরের জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জনগণের নিরাপত্তা ও তাদের সম্পদ ও সকল ধর্মীয় স্থাপনার সুরক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের টহল ও প্রহরা নিশ্চিত করুন। দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে স্বৈরাচার মুক্তির এই অর্জন যেন কোনও সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠীর অপতৎপরতায় নষ্ট না হয় সেটা নিশ্চিত করতে আপনার প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ দলের উদাত্ত্ব আহ্বান।
সোমবার (৫ আগস্ট) টানা ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পর রাতে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে গণভবনে যান মির্জা ফখরুল ও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা। এই বৈঠক চলাচলে সেখানে যান সরকারি চাকরিতে কোটা ও পরে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে অসহযোগের ডাক দেওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি মহাসচিব।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আমাদের ছাত্ররা যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে গণঅভ্যুত্থানে এবং তাদের এই ত্যাগ, তাদের এই কষ্ট, তাদের এই পরিশ্রমের ফলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কারণে এই ফ্যাসিবাদী দানবীয় খুনি হাসিনা সরকারের আজকে পতন ঘটেছে এবং তারা আজকে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে সবাই। এটা একটা বিশাল সাফল্য। সেজন্য আমি হেন্ড আস টু দ্যা স্টুডেন্টস। ছাত্রদের প্রতি আমার দলের পক্ষ থেকে অভিবাদন।
রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনার সিদ্ধান্ত তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই পতনের পর দেশকে কিভাবে সুস্থভাবে পরিচালনা করা যায় পরামর্শ নেয়ার জন্য সেনা বাহিনীসহ তিন বাহিনী প্রধান তারা আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তারই ফলোশ্রুতিতে আমরা এখানে এসেছিলাম, রাষ্ট্রপতির সাথে কথা বলেছি। এর মধ্যে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা হচ্ছে প্রথমত- আজকেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে তারা অচিরেই একটা ইন্টারিয়াম গভর্নমেন্ট গঠন করবেন এবং সেই গভর্নমেন্ট তিন মাসের মধ্যেই নির্বাচন করবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যাকে অন্যায়ভাবে বেআইনিভাবে আটক করে রাখা হয়েছিলো। তিনি অসুস্থ, দুই একদিনের মধ্যে তারা মুক্তি দেবেন। তৃতীয়ত- এই আন্দোলনে যাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে সেইসব ছাত্র-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলের নেতা সকলকেই তারা মুক্তি দেবেন।
নতুন সরকার কবে গঠন করা হবে? এরকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেম, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এই সরকার গঠন করার সম্ভাবনা আছে। কি ধরনের সরকার হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সরকারটা হবে ইন্টারিয়াম গভমেন্ট। এর চরিত্র হবে নির্দলীয় সরকার। আমরা এটা প্রস্তাব দিয়েছি। তারা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
সরকারের প্রধান কে হবেন- এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। মূল বিষয় হচ্ছে যে, আলোচনা করা দরকার। আমরা তো দলের সঙ্গে বসতে পারিনি। আমরা দলের সঙ্গে বসে প্রস্তাব নিয়ে আসব। অন্যান্য দলগুলোও প্রস্তাব নিয়ে আসবে। তখন নির্ধারণ হবে।
দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি যাতে না হয় সেজন্য আমরা সমগ্র জাতিকে আহ্বান জানিয়েছি, সবাই শান্ত হোন। নৈরাজ্য যাতে না হয় সেদিকে সকলে সর্তক থাকুন, ব্যবস্থা নিন।
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনে সব কিছু জানাবেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আমরা আলোচনা আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুক্তি দাবি করেছি। এই সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অব. ফজলে আকবর এলাহী উপস্থিত ছিলেন।