উগান্ডায় বন্দি ভারতীয় ধনকুবেরের কন্যা

0
28-10-24-1

অসওয়াল পরিবারের কর্মচারী মুকেশ মেনারিয়াকে অপহরণ এবং খুনের অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় বসুন্ধরাকে আটক করে উগান্ডার পুলিশ। ব্যক্তিগত বিমানসহ সারা বিশ্বে অসওয়াল পরিবারের যত বাড়ি রয়েছে, সেগুলো দায়িত্ব ছিল মুকেশের ওপর। তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় বন্দি সুইজারল্যান্ডের ভারতীয় বংশোদ্ভূত ধনকুবের পঙ্কজ অসওয়ালের কন্যা বসুন্ধরা অসওয়াল।

রাজস্থান থেকে উঠে আসা মুকেশ ২০১৭ সাল থেকে অসওয়াল পরিবারের সঙ্গে কাজ করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাদের সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দিয়েছিল। মুকেশ নিখোঁজ হওয়ার পরেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে বসুন্ধরার দিকে। অভিযোগ, মুকেশকে নাকি প্রথমে অপহরণ এবং পরে খুন করানো হয়েছে। যদিও অসওয়াল পরিবারের দাবি, মুকেশ জীবিত রয়েছেন এবং বর্তমানে তানজানিয়ায় রয়েছেন।

বসুন্ধরার জন্ম ১৯৯৯ সালে। সুইজারল্যান্ডের বিত্তশালী ব্যবসায়ী পঙ্কজ এবং রাধিকা অসওয়ালের কন্যা বসুন্ধরা ‘অসওয়াল গ্রুপ গ্লোবাল’ গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বসুন্ধরা সুইজারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ফিন্যান্স’ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বসুন্ধরা একটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ক্যাপচারিং প্ল্যান্ট তৈরি করিয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থায় পুনর্ব্যবহত জল সরবরাহের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন।

 

বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অসওয়াল পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় দুইলাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের একটি বিশ্ববিখ্যাত এস্টেট ‘ভিলা হারি’ প্রায় ১,৬৪৯ কোটি টাকায় কিনেছেন তারা।

সেই ধনকুবের পরিবারের কন্যাই বন্দি পূর্ব আফ্রিকার দেশের জেলে। গত তিন বছর ধরে উগান্ডায় তার পরিবারের কারখানার দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন বসুন্ধরা। গত ১ অক্টোবর তাদেরই পরিবারের একটি মদের কারখানা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।

অসওয়াল পরিবারের অভিযোগ, বসুন্ধরাকে আটক করতে এসেছিলেন ‘অস্ত্রধারী ২০ জন লোক’। ওই সশস্ত্র ব্যক্তিরা নিজেদের উগান্ডার পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে আটক করেন তাকে। উগান্ডার পুলিশ বসুন্ধরাকে ফৌজদারি এবং বাণিজ্যিক অপরাধসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে আটক করেছে।

বসুন্ধরার পরিবারের অভিযোগ, ‘অবৈধ ভাবে’ আটক করা হয়েছে তাকে। তার আটককে ‘কর্পোরেট এবং রাজনৈতিক চক্রান্ত’ বলেও দাবি করেছে অসওয়াল পরিবার।

অসওয়াল পরিবার আরও দাবি করেছেন, বসুন্ধরার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে সে সব ‘মিথ্যা’। তাদের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিরা উগান্ডা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়েই নাকি এমনটা করেছেন।

অসওয়ালদের আরও দাবি, যে মুকেশকে খুনের দায়ে বসুন্ধরাকে আটক করা হয়েছে তিনি জীবিত রয়েছেন এবং বর্তমানে তানজানিয়ায় বসবাস করছেন। তা সত্ত্বেও উগান্ডা কর্তৃপক্ষ বসুন্ধরাকে মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছে।

উগান্ডা কর্তৃপক্ষের দাবি, বসুন্ধরাকে একজন নিখোঁজ ব্যক্তির মামলায় আটক করা হয়েছে। তারপর থেকে তিন সপ্তাহেরও বেশি জেলবন্দি তিনি।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অসওয়ালদের সাবেক কর্মচারী মুকেশকে উগান্ডায় অপহরণ করার পর তানজানিয়ায় পাচার করা হয়। উগান্ডার সীমান্তের কাছে শাকা থানায় নাকি গ্রেপ্তারও করা হয় মুকেশকে।

অন্যদিকে ধনকুবের পরিবারের অভিযোগ, বসুন্ধরাকে আটকের পরেই পুলিশ তার ফোন কেড়ে নেয় এবং তাকে তার আইনজীবী এবং পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে জেলের মধ্যে তাকে খারাপ খাবার দেওয়া হচ্ছে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অসওয়ালদের অভিযোগ।

অভিযোগ, জেলের মধ্যে বসুন্ধরাকে নিরামিষ খাবার খেতে দেওয়া হচ্ছে না এবং আগাম নোটিশ ছাড়াই এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। বসুন্ধরার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল থেকে সম্প্রতি একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছিল। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছে, বসুন্ধরা জেলের যে কুঠুরিতে বন্দি, তার মেঝেতে রক্ত এবং মল পড়ে রয়েছে।

সেই পোস্টে দাবি করা হয়েছে, বসুন্ধরাকে ৯০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জুতো ভর্তি রুমে বসতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং প্রায় পাঁচ দিন ধরে তাকে গোসল করতে বা পোশাক পরিবর্তন করতে দেওয়া হয়নি।

কন্যাকে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে ইতিমধ্যেই উঠেপড়ে লেগেছেন পঙ্কজ এবং রাধিকা। ‘ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রারি ডিটেনশন (ডব্লিউজিএডি)’ এর কাছে একটি আবেদনে, পঙ্কজ তার মেয়েকে আটক করার বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই দপ্তরে পঙ্কজের পরিবারের অভিযোগ, কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছিল বসুন্ধরাকে।

উল্লেখ্য, বসুন্ধরার পাশাপাশি অসওয়ালদের কোম্পানির অ্যাটর্নি রিটা এনগাবিরকেও হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *