হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মাদক সংগ্রহ করেন তিন অভিনেত্রী!
মাদক সম্পৃক্ততায় নাম জড়িয়েছে ছোট পর্দার কয়েকজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর। এদের মধ্যে সাফা কবির ও মুমতাহিনা চৌধুরী ওরফে টয়ার বিরুদ্ধে মাদক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে । এছাড়া, ছোট পর্দার আরেক তারকা তানজিন তিশা ও সংগীত শিল্পী সুনিধি নায়েকের মাদক সম্পৃক্ততা ঘিরে অনুসন্ধানে নেমেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (নারকোটিক্স)। শুধু তাই নয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি মাদকসহ গ্রেফতার হওয়া এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে তথ্য-প্রমাণসহ এসব তারকার নাম বেরিয়ে আসে। এসব তারকা মাদক সংগ্রহ করে আসছেন একটি বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে। ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিন্দম রায় দীপ। তাকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নারকোটিক্স জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ নজরদারির একপর্যায়ে গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন দীপ। এ সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সিসা, এমডিএমএ, এলএসডি ও কুসসহ বেশ কিছু মাদক জব্দ করা হয়। পরে নারকোটিক্সের একটি বিশেষায়িত টিম দীপকে দুই দিনের রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারকোটিক্সের সহকারী পরিচালক রাহুল সেন জানান, দীপকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে আমরা কয়েকজন প্রথম সারির অভিনেত্রী ও মডেলের মাদক সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদক কারবারি দীপের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং পরীক্ষা করা হয়। এতে জনপ্রিয় কয়েকজন অভিনেত্রীর মাদক সম্পৃক্ততার তথ্য মেলে। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া মাদকের অর্ডার সংক্রান্ত কয়েকটি সুনির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং রেকর্ডও পাওয়া যায়।
এক কর্মকর্তা বলেন, দীপের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাফা, টয়া, তিশা এবং সুনিধি নায়েকের নামে সেভ করা কয়েকটি নম্বর থেকে নিয়মিত মাদকের অর্ডার দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। নম্বরগুলোর রেজিস্ট্রেশন রেকর্ড যাচাইয়ে দেখা যায়, সেগুলো সাফা কবির ও টয়ার নামেই রেজিস্ট্রেশন করা। তবে, তানজিন তিশার নম্বরটির তার মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন রয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, দীপ গ্রেফতার হওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্টরা তাদের মোবাইল ফোন থেকে গোপন চ্যাটিং রেকর্ড মুছে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে দীপের মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এতে মাদক কেনাবেচা সংক্রান্ত চ্যাটিং রেকর্ড মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোপনীয়তার জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক নামে এসব মাদক বিক্রি করা হয়ে থাকে। যেমন এমডিএম ‘ই’ নামে, এলএসডি ‘এসিড’ এবং এক ধরনের তরল গাঁজা টিএসসি নামে কেনাবেচা হয়। ইলেকট্রিক সিগারেটের মতো ভেপ আকারে তরল গাঁজা সেবন করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, এমডিএমএ পরীক্ষাগারে তৈরি এক ধরনের কৃত্রিম ওষুধ। এটি অনেক দেশে এস্টাসি বা সুখানুভূতির মাদক হিসেবে পরিচিত। এটি ইয়াবার উপকরণ মেথাএমফিটামিনের মতোই অতি উত্তেজক মাদক। এটি মানবদেহে এমন একটি শক্তিশালী প্রভাব তৈরি করে যাতে সময় এবং উপলব্ধি জ্ঞানের বিচ্যুতি ঘটে। তবে অনেক সময় এটি শান্তি, আনন্দ, সহানুভূতি এবং এক ধরনের আত্মবিশ্বাসের বর্ধিত অনুভূতি তৈরি করে।