হঠাৎ রাজনীতির মাঠে গরম হাওয়া


গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকাল এরই মধ্যে আট মাস পেরিয়ে ৯ মাসে পড়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগোল এবং কবে নির্বাচন হচ্ছে, তা এখনো খুব স্পষ্ট নয়। সংস্কার ও নির্বাচনের টাইমফ্রেম নিয়ে জুলাই- আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ও দূরত্ব বাড়ছে। এই অবস্থায় আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হতে যাচ্ছে।
এই বৈঠকে বিএনপি নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ সম্পর্কে জানতে চাইবে এবং বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের অবস্থান জানার পর তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। দলটির পক্ষ থেকে পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ারও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বিএনপির মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন চায়।
আর জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংস্কারের রোডম্যাপ ও গণপরিষদ নির্বাচন। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর এই মতানৈক্যের মধ্যে সরকারের দুজন উপদেষ্টার সাম্প্রতিক মন্তব্য, নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি জনপরিসরে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে পালিত হয়েছে ‘মার্চ ফর ইউনূস’ কর্মসূচি। গত ১৩ এপ্রিল পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’ স্লোগানে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে ওই কর্মসূচি পালিত হয়।
এই কর্মসূচি থেকে সংস্কারের আগে নির্বাচন না দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কমপক্ষে তিন বছর করার দাবি জানানো হয়। জুলাই আন্দোলনে আহতসহ কয়েকজন তরুণ এই কর্মসূচি পালন করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ ধরনের দাবির পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত জানানোর ঘটনা ঘটছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময় নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও দলগুলো মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছে। অনেকের ধারণা, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক মাঠে দ্রুত নতুন মেরুকরণ হতে পারে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মাঠে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সক্রিয় হতে পারে। অন্য দলগুলোও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবে এবং সে কারণে রাজনৈতিক মাঠে উত্তাপ বাড়বে।
দুই উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে আলোচনা : গত শনিবার রাজধানীর মিরপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘আমরা অনির্বাচিত, এই কথা কে বলল? আমাদের তো এই ছাত্ররা, জনতা—যারা নাকি এই পরিবর্তনটা এনে দিয়েছে, তারাই রাষ্ট্র গঠন করেছে, তারাই সরকার গঠন করেছে, তাদের দ্বারা নির্বাচিত আমরা। কাজেই আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের যে চাহিদা, সেটা মেটানো।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সম্প্রতি সুনামগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাস্তা থেকে আমাকে বলতেছে, আপনারা আরো পাঁচ বছর থাকেন।’ গতকাল মঙ্গলবারও সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর সরকারকে ক্ষমতায় রাখার বিষয়ে আমি কিছু বলিনি, এ কথা জনগণ বলেছে।’
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে বিভ্রান্তি : গত শনিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এবং সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বৈঠক করেন। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশনকে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং প্রথমে গণমাধ্যমকে জানায়। পরে সংশোধিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনের সময় আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে বলা হয়। এর আগেও কখনো ডিসেম্বর, কখনো ডিসেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে জানানো হয়।
ডিসেম্বরের টাইমলাইন নিয়েই প্রস্তুতি ইসির : তবে এসব ঘটনার মধ্যে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তাদের প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি যেন পিছিয়ে না থাকে সে জন্য কাজগুলো গুছিয়ে রাখা হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে কাগজ কী পরিমাণ লাগে, সে সম্পর্কে ধারণা নেওয়া, এসংক্রান্ত বাজেটের সংস্থান এবং আগের নির্বাচনের কিছু কাগজপত্র বিজি প্রেসে রয়েছে সেগুলোর গুণগত মান নষ্ট হয়ে থাকলে ডিসপোজালের ব্যবস্থা করা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২১ প্রকার ফরম, ১৭ প্রকার প্যাকেট, পাঁচ প্রকার পরিচয়পত্র, আচরণবিধি, প্রতীকের পোস্টার, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়াল, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, নির্দেশিকাসহ অনেক কিছু মুদ্রণ করতে হয়। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব মুদ্রণ করে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথাও গতকালের সভায় তুলে ধরা হয়।
নির্বাচনের আগে কতটা সংস্কার : নির্বাচনের আগে কতটা সংস্কার হবে—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিশদ সংলাপ করছে। এই সংলাপ শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলো একটা ঐকমত্যে পৌঁছাবে, তখন স্পষ্ট হবে কতটা সংস্কার আমরা করব এবং কতটা সংস্কার পরবর্তী সরকার করবে।’ প্রেসসচিব মনে করেন, সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়টি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের ওপর।
বিএনপি যা বলছে : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত রবিবার দলীয় এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বলেছেন, ‘আজ যারা সংস্কারের কথা বলছে তারা এয়ারকন্ডিশনড রুমের ভেতরে বসে, বড় বড় দামি দামি অফিসে বসে বলছে। সরকার তাদের গাড়ি দিচ্ছে, বেতন-বোনাস-ভাতাদি দিচ্ছে, তারপর তারা বসে বসে সংস্কারের কথা বলছে। বিএনপি এসব সুবিধার মধ্যে থেকে সংস্কারের কথা বলেনি। বিএনপি যখন সংস্কারের কথা বলছে, তখন তারা একদিকে রাজপথে স্বৈরাচারের সঙ্গে যুদ্ধ করছে-আন্দোলন করছে, আরেকদিকে দেশ গঠনের চিন্তা করছে।’
তারেক রহমান আরো বলেন, ‘যারা বলছে আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন, তাদের ক্ষেত্রে আমরা কী দেখছি? তারা মুখে বলছে পরে নির্বাচন, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নিজের প্রার্থিতা ডিক্লেয়ার করে বেড়াচ্ছে। বিএনপি তো এটা করছে না। কারণ বিএনপি বিশ্বাস করে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার ব্র্যাকেটবন্দি কোনো বিষয় নয়। তাই আমরা বলি, নির্বাচন ও সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার চলতে থাকবে, কিন্তু নির্বাচন হতে হবে সময়মতো এবং সে কারণেই আমরা অনেককেই দেখছি তারা মুখে বলছে আগে সংস্কার পরে নির্বাচন, কিন্তু বাস্তবে তারা বিপরীত কাজটি করছে; যেটি বিএনপি কখনো বলে না এবং করে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আর পাঁচ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার অভিপ্রায়ের যে বক্তব্য উপদেষ্টারা দিচ্ছেন, তা রাজনীতির মাঠ গরম করছে। সব কিছুর মূলে আছে নির্বাচন বিলম্বিত করা, কারো কারো ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার সুপ্ত বাসনা। আমি মনে করি, নির্বাচনের রোডম্যাপ দিলেই সব বিতর্কের অবসান ঘটবে। মানুষের মনের উষ্মা কেটে যাবে।’
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘কোনো দায়িত্বশীল চেয়ারে বসে এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়, যা হাস্যরসের সৃষ্টি করে। কোনটাকে নির্বাচিত সরকার বলে আর কোনটা অনির্বাচিত সরকার, সেই বিষয়টি কারো অজানা নয়। সুতরাং, এসব নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে শুধু।’ তিনি আরো বলেন, ‘জনগণ ১৭ বছর তো নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করেছে। আওয়ামী লীগ আমলে যে নির্বাচন হয়নি তার প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নেমেছে। সুতরাং, নির্বাচন তো দিতেই হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়নি—জামায়াত : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীরা এরই মধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন। জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা চাই নির্বাচন হোক নির্বাচনসুলভ পরিবেশে, যেখানে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে স্বাধীনভাবে। কোনো ধরনের প্রহসনের নির্বাচন আমরা সমর্থন করি না।’ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বর্তমান সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকুক’—এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো দেউলিয়া নয় যে তারা দেশ পরিচালনায় অক্ষম। যাঁরা সচেতন, যুক্তিসংগতভাবে চিন্তা করেন, তাঁরা কখনো এমন কথা বলবেন না। শুধু যাঁরা রাজনৈতিকভাবে দিশাহীন বা চিন্তার দৈন্যে ভুগছেন, তাঁরাই এমন মন্তব্য করতে পারেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই সুশৃঙ্খলভাবে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার হোক। তবে সেই সংস্কারের অজুহাতে কেউ বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ না পাক। দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন দিতে হবে, এটাই আমাদের স্পষ্ট দাবি।’
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরো বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হোক, তা চাই না, ভবিষ্যতেও চাইব না। সম্পর্ক নষ্ট করা ইসলামী আদর্শেরও পরিপন্থী। আমরা বন্ধুত্বে বিশ্বাস করি এবং আশা করি, যাঁরা বন্ধু ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন, তাঁরা আমাদের সঙ্গে সদাচরণ করবেন।’
এনসিপি দল নিবন্ধনে ইসির কাছে সময় চাইবে : সংস্কার শেষে নির্বাচনের পক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থান থাকলেও দলের শীর্ষ নেতাসহ অনেক নেতাকর্মী প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় মন্তব্য করেছেন। তবে এই বক্তব্য ব্যক্তিগত, দলীয় কোনো বক্তব্য নয় বলে জানিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার তুষার। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের দলীয় বক্তব্য নয়। এটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনেক মানুষ বলছে। কারণ সরকারের কর্মকাণ্ডে তারা সন্তুষ্ট। আমাদের দলগত অবস্থান হচ্ছে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষে নির্বাচন হতে হবে। সংস্কারগুলো বাদ দিয়ে নয়। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে, এটা তো চাপ। এটা তো সংস্কারকে এড়িয়ে যাওয়া। আপনি যদি ঠিক করেন যে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেব, তার মানে হচ্ছে সংস্কার হোক বা না হোক আপনি নির্বাচন দিয়ে দেবেন। আমরা সেটা বলছি না। আমরা বলছি যে সংস্কার শেষে নির্বাচন।’
সারোয়ার তুষার আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে জাতীয় নাগরিক পার্টির নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হবে। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। আমরা নির্বাচন কমিশনকে নির্দিষ্ট সময়ের কথা বলব না। আমরা বলব, সময় আরো বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা আশা করি, দুই মাসের মধ্যে পুরো সাংগঠনিক বিস্তার বাড়াতে পারব।’
বাম দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক সাইফুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই ডিসেম্বরের পর নেওয়ার সুযোগ নেই। সর্বশেষ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ধরে সংস্কার সুপারিশ চূড়ান্ত করার তাগিদ দিয়েছেন; যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে ১৮ মিনিট পর সংশোধনী দিয়ে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে; যা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চয়ই বিষয়টি আগামী দিনে স্পষ্ট করবেন।’
তিনি আরো বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টারা নির্বাচন ও সরকারের মেয়াদের বিষয়ে মনগড়া তথ্য দিচ্ছেন। একজন বলছেন, ‘কে বলেছে আমরা অনির্বাচিত?’ আবার একজন জনগণের দোহাই দিয়ে এই সরকারকে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের কথা বলছেন। এসব কথা উদ্ভট ও হাস্যকর। গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই কথা অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, যা চলমান সংকটকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে আমরা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকেই আমলে নিতে চাই। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করা হবে বলে আশা করি। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা নেই। যারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে, তাদের নতুন কোনো সংকট সৃষ্টির অশুভ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করি।’
বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছিলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই।’ তিনি নতুন করে আর কিছু জানাননি। ফলে অন্যরা কী বলছে সেটি বিবেচ্য নয়, তবে নির্বাচন বিলম্বিত করার যদি কোনো ষড়যন্ত্র হয়, সেটি জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করবে।”