এক যুগেও বিচার মেলেনি

0
jhhfgjmgh

সাভারে রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৬ জন পোশাককর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলাটি এক যুগেও নিষ্পত্তি হয়নি। পুলিশের করা হত্যা মামলাটি গত বছরের ১৫ জানুয়ারি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্ট আদালতকে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এরপর দ্বিগুণের বেশি সময় পার হলেও এটি নিষ্পত্তি হয়নি। আগের মতো মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আটকে রয়েছে।

ইমারত নির্মাণ আইনে করা অন্য মামলার বিচারকাজও ঝুলে আছে। তবে বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ইকবাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, এ মামলায় ৯৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলার পরবর্তী তারিখ ১৯ মে ১৭ সাক্ষীকে আদালতে হাজির হতে সমন দেওয়া হয়েছে।

দ্রুত সময়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলার বিচার শেষ করা হবে। এত দিনেও বিচারকাজ শেষ না হওয়ার পেছনে বিগত সরকারের অবহেলা রয়েছে।
আসামি সোহেল রানার আইনজীবী মাসুদ খান খোকন বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী হাজির করতে পারে না। এতে বিচারকাজ এগোচ্ছে না।

আমরা চাই, এ মামলার বিচার দ্রুত শেষ হোক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক।’
বর্তমানে হত্যা মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। মামলায় এ পর্যন্ত ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল।

ওই দিন সাক্ষী না আসায় ১৯ মে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে। অন্যদিকে ইমারত আইনের মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল মামলায় উচ্চ আদালতের আদেশ দাখিলের জন্য ছিল। তবে আসামিপক্ষ তা দাখিল করতে পারেনি। এ জন্য আগামী ৩১ আগস্ট আদেশ দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, সাভারের রানা প্লাজা ভবন ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে। এর নিচে চাপা পড়েন সাড়ে পাঁচ হাজার পোশাক শ্রমিক। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় ২৫ এপ্রিল সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’ মামলা করেন।

২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার ৪১ আসামির মধ্যে ভবন মালিক সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা যান। তিনজনকে বাদ দিয়ে হত্যা মামলায় এখন আসামির সংখ্যা ৩৮। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করার আদেশ দেন।

একই ঘটনায় ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল সাভার থানায় আরেকটি মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ১৩৫ জনকে সাক্ষী করা হয়। ২০১৬ সালের ১৪ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তবে ইমারত নির্মাণ আইনের মামলাটির বিষয়ে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। বিচার শুরু হলেও একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল বেনাপোল থেকে রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে রানা কারাগারে আটক রয়েছেন।

২০২২ সালে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন সোহেল রানা। আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুল দেন। রুলের শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল জামিন মঞ্জুর বলে রায় দেন হাইকোর্ট। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। পরবর্তী সময়ে ওই বছরের ৯ এপ্রিল হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতকে নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।

ইমারত আইনের মামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ইশতিয়াক হোসেন জিপু বলেন, ‘উচ্চ আদালত এক আসামির পক্ষে মামলার কার্যক্রম ছয় মাস স্থগিত করেন। তখনকার রাষ্ট্রপক্ষ মামলা এগোনোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর মামলাটি নিয়ে কাজ করছি। আসামিপক্ষ যদি স্থগিতাদেশ বাড়াতে না পারে, তাহলে মামলার বিচার শুরু হবে। আদালত তাদের উচ্চ আদালতের আদেশ দাখিল করতে বলেছেন। তারা দাখিল করতে না পারলে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। অনেকটা সময় চলে গেছে। আমরা সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেব।’

দুই মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, সাভার পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার সাবেক টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, পৌরসভার সাবেক সচিব মর্জিনা খান, সাবেক সচিব মো. আবুল বাশার, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ এবং ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *