আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে

0
vgjnghm

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে রাতভর অবস্থান এবং মিন্টো রোডের মোড়ে মঞ্চ তৈরি করে বিক্ষোভের পর গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত তাঁরা ‘শাহবাগ ব্লকেড’-এর ঘোষণা দিয়েছেন।

একই দাবিতে আজ শনিবার বেলা তিনটায় শাহবাগে গণজমায়েত কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের জুলাই অভ্যুত্থানের স্থানগুলোতেও গণজমায়েত কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এই আন্দোলনের উদ্যোক্তারা বলেছেন, শাহবাগ থেকে তাঁদের ‘দ্বিতীয় অভ্যুত্থান পর্ব’ শুরু হবে।

গতকাল রাতেও শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চলছিল। নানা স্লোগান ও বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছিলেন বিক্ষোভকারীরা। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর আহ্বানে গত বৃহস্পতিবার রাতে যমুনার সামনে অবস্থানের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়। ওই রাতে ও গতকাল শাহবাগের কর্মসূচিতে ইসলামী আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়েছেন। আছেন ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, খেলাফত ছাত্র মজলিস, ইনকিলাব মঞ্চ, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও।

এই বিক্ষোভ চলার মধ্যেই গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনটি দাবির কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। দাবিগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। এরপর এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ অনেকেই একই পোস্ট দিয়েছেন।

পরে নাহিদ ইসলাম আরেকটি পোস্টে লিখেছেন, শাহবাগের অবস্থান চলমান থাকবে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড চালু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ আবারও ঢাকা শহরে মার্চ করবে।

এদিকে গতকাল রাত ১১টার দিকে শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি থেকে হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ তিন দফা দাবি তুলে ধরে গণজমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, তিন দফা দাবিতে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আগামীকাল শনিবার (আজ) বেলা তিনটার দিকে শাহবাগে গণজমায়েত কর্মসূচি পালন করা হবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, সারা ঢাকায় জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি যাঁরা আওয়ামী লীগের নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন; পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের স্বজন; মোদিবিরোধী আন্দোলনের শিকার যাঁরা হয়েছেন—সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শাহবাগে গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় তিনি সারা দেশে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিটি পয়েন্টেও (স্থান) গণজমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় শাহবাগে সড়ক অবরোধ চলছিল। সেখানে এলইডি স্ক্রিনে জুলাই অভ্যুত্থানের বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হচ্ছিল। এর ফাঁকে ফাঁকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে শাহবাগ চত্বরে বিজ্ঞাপন বোর্ডের নিচে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন এনসিপির নেতারা। অন্য দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরাও আলাদা জায়গায় অবস্থান করে স্লোগান দেন। তার আগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা সড়কের ওপর মাগরিবের নামাজ আদায় করেন।

বিক্ষোভে ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘এই মুহূর্তে ব্যান চাই, আওয়ামী লীগের ব্যান চাই’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

বিক্ষোভকারীদের হাতে জাতীয় পতাকাসহ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিসংবলিত পোস্টার দেখা যায়। অনেকে মাথায় জাতীয় পতাকা, কেউ কেউ কালেমাখচিত পতাকা বেঁধে এসেছেন। অনেকের হাতেই ছিল কালেমা লেখা পতাকা। ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাথায় সংগঠনের নাম লেখা পতাকা বাঁধা ছিল।

মুফতি মুহাম্মদ জসিমুদ্দিন রহমানী, আসিফ আদনান, ডা. মেহেদী ও তাঁদের অনুসারীদেরও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে মাইকে বক্তব্য চলছে। সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ মাহমুদুর রহমান খানের স্ত্রী মরিয়ম খানম বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা আমাদের প্রাণের দাবি।’

রাত নয়টার দিকে শাহবাগে এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে দেরি করলে শুধু শাহবাগ নয়, সারা বাংলা ব্লকেড করে দেবেন তাঁরা। তিনি সরকারের কাছে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশেরও দাবি জানান।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী প্রথম আলোকে বলেন, দলের পক্ষ থেকে নয়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সাধারণ জনতা হিসেবে তিনি শাহবাগে এসেছেন।

শাহবাগ অবরোধ
আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট পথনকশা ঘোষণার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। রাত ১০টার পর থেকে তাঁর নেতৃত্বে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমে হাসনাতের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির কিছু নেতা-কর্মী যোগ দেন।

পরে রাত একটার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে যান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তাঁদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন। রাত একটার পর হেফাজতে ইসলামের বেশ কিছু নেতা-কর্মী যমুনার সামনে যান। রাত দেড়টার দিকে এবি পার্টির কিছু নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। রাত দুইটার দিকে যান ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা।

যমুনার সামনে রাতভর বিক্ষোভ চলার পর গতকাল সকালে সেখানে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। সকাল সাড়ে আটটার দিকে যমুনার সামনে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে হাসনাত আবদুল্লাহ ও এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঘোষণা দেন, জুমার নামাজের পর যমুনার পূর্ব পাশে ফোয়ারার (মিন্টো রোডের মোড়) সামনে বড় জমায়েত করা হবে।

এ ঘোষণা দেওয়ার সময় জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের নেতা-কর্মীরা হাসনাত ও নাসীরুদ্দীনের সঙ্গে ছিলেন। এ ঘোষণার পর পাঁচটি পিকআপ ভ্যান একত্র করে মঞ্চ তৈরি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *