পতিত আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের ১লা আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অঙ্গসংগঠনকে। এর প্রায় তিন মাস পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ছাত্রলীগকে। গত শনিবার ওই একই আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে
প্রাচীনতম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। আইনজীবীদের দেয়া তথ্যমতে, ইতিপূর্বে হরকাতুল জিহাদ, জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবিরসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ওই একই আইনে প্রথমে ছাত্রলীগ এবং শনিবার নিষিদ্ধ করা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করলে এবং তা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যূন ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তবে এটা করতে আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি বা সত্তার এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এতে বলা হয়, কতিপয় সন্ত্রাসী কার্য প্রতিরোধ এবং উহাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করার নিমিত্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। উক্ত আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রয়েছে মর্মে যুক্তিসঙ্গতকারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে। বর্তমান আইনে কোনো সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো বিধান নেই। উক্ত বিষয়টি স্পষ্টকরণসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হেতু সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-কে সময়োপযোগী করে উক্ত আইনের অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজন। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় অভিযোজন করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধকরণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী মো. মহসিন রশিদ। তিনি বলেন, আইনে বলা আছে কি কি করলে একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা যায়। আর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হতে যা যা করা লাগে তার সব কিছুই করেছে। আমি মনে করি আরও আগেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা দরকার ছিল। এ বিষয়ে সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. শাহজাহান সাজু মানবজমিনকে বলেন, গত ১লা আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে। ওই একই আইনে অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের অক্টোবর মাসে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। শনিবার নিষিদ্ধ করলো আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। তিনি বলেন, এখন থেকে আওয়ামী লীগ আর কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারবে না। কর্মসূচি পালন করলে তা আইনত অপরাধ। তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সম্পাদক ও বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ইতিপূর্বে এই আইনে হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, শিবিরসহ কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পরেও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং তফসিলভুক্ত করেছেন। শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। আমি আপনাদের বলতে চাই, ইতিপূর্বে বিএনপি’র পক্ষ থেকে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে একই প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে কিংবা সংগঠন হিসেবে বিচারের প্রস্তাব করেছিলেন। তখন তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। এ ছাড়াও আইন উপদেষ্টাও বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া উপদেষ্টামণ্ডলীর সবাই গিয়েছিলো কিন্তু সেটি মঞ্জুর হয় নাই। রোববার আবার তারা এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ যে অত্যাচার নির্যাতন করেছে, তা কল্পনাকেও হার মানায়। এই দল নিষিদ্ধ ছাড়া অন্য কোনো পথ ছিল না। এই দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধের মধ্যে দিয়ে অন্য দলগুলোর শিক্ষা নিতে হবে। ফ্যাসিজম করে কারও রক্ষা নেই।
কার্যক্রম পরিচালনার শাস্তি: সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সন্ত্রাসী কাজ করলে, সন্ত্রাসী কাজে অংশ নিলে, সন্ত্রাসী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিলে বা সন্ত্রাসী কাজ সংঘটনে সাহায্য বা উৎসাহ দিলে, সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত কাউকে সমর্থন বা সহায়তা দিলে সেই ব্যক্তি, সত্তা বা সংগঠন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত বলে বিবেচিত হবে। সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. আবুল হোসেন খন্দকার মানবজমিনকে বলেন, সন্ত্রাস দমন আইনের ধারা অনুযায়ী সত্তা বলতে কোনো আইনি প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, বাণিজ্যিক বা অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী, অংশীদারি কারবার, সমবায় সমিতিসহ এক বা একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত যেকোনো সংগঠনকে বোঝানো হয়েছে। সংগঠন নিষিদ্ধ করা মানে হচ্ছে- এ সংগঠন কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবে না। নিষিদ্ধ কোনো সংগঠন যদি কার্যক্রম কোনো ভাবে চালু রাখে, তাহলে এর বিরুদ্ধে সরকার যেকোনো রকম স্টেপ নিতে পারে। এই আইনের ৮ ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১৮ এর অধীন কোনো নিষিদ্ধ সত্তার সদস্য হন বা সদস্য বলিয়া দাবি করেন, তাহলে তিনি অপরাধ সংঘটন করিবেন এবং উক্তরূপ অপরাধ সংঘটনের জন্য তিনি অনধিক ছয় মাস পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের কারাদণ্ড, অথবা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১৮ এর অধীন কোনো নিষিদ্ধ সত্তাকে সমর্থন করিবার উদ্দেশ্যে কাউকে অনুরোধ বা আহ্বান করেন, অথবা নিষিদ্ধ সত্তাকে সমর্থন বা উহার কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোনো সভা আয়োজন, পরিচালনা বা পরিচালনায় সহায়তা করেন, অথবা বক্তৃতা প্রদান করেন, তাহলে তিনি অপরাধ সংঘটন করিবেন। ৯(২) ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নিষিদ্ধ সত্তার জন্য সমর্থন চেয়ে অথবা উহার কর্মকাণ্ডকে সক্রিয় করার উদ্দেশ্যে কোনো সভায় বক্তৃতা করেন অথবা রেডিও, টেলিভিশন অথবা কোনো মুদ্রণ বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কোনো তথ্য সম্প্রচার করেন, তাহলে তিনি অপরাধ সংঘটন করিবেন। ৯(৩) ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) অথবা (২) এর অধীন কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তিনি অনধিক সাত বৎসর ও অন্যূন দুই বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডও আরোপ করা যাবে। ১০ ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র করেন, তাহলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং তিনি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ শাস্তির দুই তৃতীয়াংশ মেয়াদের যেকোনো কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং যদি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব চৌদ্দ বৎসরের কারাদণ্ড হইবে, কিন্তু উহা ৪ (চার) বৎসরের কম হবে না। ১১ ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি বা সত্তা এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনের প্রচেষ্টা করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি বা সত্তা অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলে গণ্য হবে এবং উক্ত ব্যক্তি বা উক্ত সত্তার প্রধান, তিনি চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা অন্য যেকোনো নামে অভিহিত হোক না কেন, উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ শাস্তির দুই-তৃতীয়াংশ মেয়াদের যেকোনো কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং যদি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে উক্ত অপরাধের শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর ও অন্যূন ৪ (চার) বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড, এবং উহার অতিরিক্ত সংশ্লিষ্ট সত্তার বিরুদ্ধে ধারা ১৮ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে। ১২ ধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি বা সত্তা এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে- (ক) সাহায্য বা সহায়তা করে; বা (খ) সহায়তাকারী হিসেবে অংশগ্রহণ করে; বা (গ) অন্যদের সংগঠিত বা পরিচালনা করে; বা (ঘ) অবদান রাখে; তাহলে উক্ত ব্যক্তি বা সত্তা অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলে গণ্য হবে এবং উক্ত ব্যক্তি বা উক্ত সত্তার প্রধান, তিনি চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা অন্য যেকোনো নামে অভিহিত হোক না কেন, উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ শাস্তির দুই-তৃতীয়াংশ মেয়াদের যেকোনো কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং যদি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে উক্ত অপরাধের শাস্তি হইবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর ও অন্যূন ৪ (চার) বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা যাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এডভোকেট হায়দার , প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জাতিসংঘ (U.N ) তালিকাভূক্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা কম্বাইন্ড ল রাইটস ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন ।
প্রধান কার্যালয় : গাজীপুর জজকোর্ট সংলগ্ন এফ ১০২/১৫ হাক্কানী হাউজিং সোসাইটি,গাজীপুর, ঢাকা। মোবাইল নম্বর : 01701 331047