দুপুরে আটক ৯ বাস, রাতে টাকা খেয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

0
Capture

হাফ ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী নীলাচল পরিবহনের ৯টি বাস আটকে রেখে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কথা কাটাকাটির জেরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একদল শিক্ষার্থী বাসগুলো আটকে রাখে। তবে মধ্যস্তকারীরা বাসচালকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেগুলো ছেড়ে দেয়।

রোববার (১১ মে) দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন মহাসড়কের দুপাশে বাসগুলো আটকে চাবি নিয়ে যান শহীদ সালাম-বরকত হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসগুলো ছেড়ে দেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শহীদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক ছাত্র কামরুল হাসান (হিরন) রোববার সকালে মানিকগঞ্জের উথুলী এলাকায় যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসের সামনে থেকে নীলাচল পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। গন্তব্যস্থলের ভাড়া বাবদ ১২০ টাকার স্থলে তিনি হাফ ভাড়া ৬০ টাকা দিতে চাইলে বাসচালকের সহকারী ১০০ টাকা দিতে বলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়।

শিক্ষার্থী কামরুলের অভিযোগ, তার সঙ্গে ওই সহকারী খারাপ আচরণ করেছিলেন। পরে কামরুল পুরো ভাড়া দিয়ে বাস থেকে নেমে যান এবং ক্যাম্পাসে ফিরে হলের সহপাঠীদের নিয়ে ওই বাসগুলো আটক করেন। পরে বাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে রাত ৯টার দিকে বাসগুলো ছেড়ে দেন তারা।

তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও আটক হওয়া বাসচালকদের সূত্রে জানা গেছে, বাস আটকের পর নীলাচল পরিবহনের চেকার মো. ফয়সাল ও সাভারের বিএনপির এক নেতার আত্মীয় বেলালসহ বাসের কয়েকজন প্রতিনিধি ক্যাম্পাসে আসেন বিষয়টি সমাধানের জন্য। ক্যাম্পাসে প্রবেশের আগে ফয়সাল আটকে রাখা বাসগুলো থেকে মোট ১৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন এবং এই টাকা শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিষয়টি সমাধান করবেন বলে জানান। পরে তারা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং রাতে শিক্ষার্থীরা বাসের চাবিগুলো দিয়ে দেন প্রতিনিধিদের কাছে।

চেকার ফয়সাল চাবিগুলো নিয়ে বাসের চালকদের বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন দুজন সহকারী প্রক্টর ও ক্যাম্পাসের সাংবাদিকেরা। এ সময় সহকারী প্রক্টরেরা বিষয়টি কীভাবে সমাধান হলো জানতে চান ফয়সালের কাছে। তখন ফয়সাল অসামঞ্জস্য কথা বলতে থাকেন। ওই ১৬ হাজার টাকা কাদের দেওয়া হয়েছে—এমন তথ্য জানতে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বললে তিনি দৌঁড়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় একটি বাস উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিয়ে যান এবং বাসের যেসব প্রতিনিধি রোববার ক্যাম্পাসে এসেছিলেন তারা আবার ক্যাম্পাসে এসে প্রশাসনের কাছে ঘটনার রহস্য জানানোর দাবি তোলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, চেকার ফয়সাল, বেলালসহ নীলাচল বাসের প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে ছাত্রদলের নেতা নবীনুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে হেঁটে হেঁটে চলে যান। এ সময় শহীদ মিনার এলাকায় শাখা ছাত্রদলের সদস্য মেহেদি হাদান ইমনসহ (৪৯ ব্যাচ) কয়েকজন ছাত্রদল নেতা-কর্মীকে দেখা যায়।

এ বিষয়ে নবীনুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, একটি ঘটনায় শিক্ষার্থীরা বাস আটকে রেখেছিল। সেটা নিয়ে আমার পূর্বপরিচিত বেলালসহ কয়েকজন ক্যাম্পাসে আসেন। আমি তখন তাদের বলি শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ করে সমাধান করতে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করে অনুরোধ জানালে তারা বাসগুলো ছেড়ে দেন। টাকা-পয়সার লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, বাস আটকের ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তারা বাস ছেড়েও দিয়েছে। তবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আমরা জানতে পেরেছি, বাস কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে এসে আমাদের না জানিয়ে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করেছে। যেখানে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা অসামঞ্জস্যতা তথ্য পেয়েছি। সোমবার বাস কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *