এফবিসিসিআইর নির্বাচন করতে পারবেন না সাবেক অনেক পরিচালক

0
gijgyt

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের আকার ৮০ থেকে কমিয়ে ৪৬ জনে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৪৬ জনের এই পর্ষদের মধ্যে ১২ জন থাকবেন মনোনীত, বাকিরা ভোটে নির্বাচিত হবেন। পর্ষদে সহসভাপতির পদ ছয়টি থেকে কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, সহসভাপতিসহ শীর্ষ নেতৃত্বকেও সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা পরিবর্তন করে এসব বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ বিধিমালার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় মতামত বা ভেটিংও দিয়েছে। এখন বাণিজ্য উপদেষ্টার মতামতের পর বিধিমালাটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারির পর্যায়ে রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

বিধিমালায় যেসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে তাতে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনের সাবেক পরিচালকদের অনেকের নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হতে পারে। টানা দুইবার পরিচালক হওয়ার পর একবার বিরতি না দিয়ে কেউ আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না—এমন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। বিধানটি শুধু ভবিষ্যতের জন্য নয়, অতীতের জন্যও প্রযোজ্য হবে। সে ক্ষেত্রে গত দুই পর্ষদে থাকা অনেক ব্যবসায়ী আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

টানা দুইবার দায়িত্ব পালন করা সাবেক পরিচালকদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হওয়ায় এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ। তাদের দাবি, সাধারণত আইন বা বিধি ভবিষ্যৎমুখী হয়। বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে পূর্ববর্তী পর্ষদে পরপর দুইবার যাঁরা পরিচালক ছিলেন, তাঁদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। এতে ফেডারেশনে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট দেখা দেবে।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই বিধিমালাটির প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

— পরিচালনা পর্ষদের আকার ৮০ থেকে কমিয়ে ৪৬ জন করা হচ্ছে।
— পর্ষদে ১২ জন থাকবেন মনোনীত, বাকিরা ভোটে নির্বাচিত হবেন।
— সহসভাপতির পদ ছয়টি থেকে কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনা হবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয় সদস্যদের একাংশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি পদ থেকে মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেন। পরে ১১ সেপ্টেম্বর ফেডারেশনের পর্ষদ বাতিল করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের সদস্যরা—এই ব্যানারে যাঁরা পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন, পরে তাঁরাই এফবিসিসিআইয়ের বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ গঠন করেন। তাঁরা গত সেপ্টেম্বরে মনোনীত পরিচালক প্রথা বাতিল, পর্ষদের সদস্যসংখ্যা কমানোসহ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাব দেন। পরে অক্টোবরে বিভিন্ন চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ১২টি সংস্কার প্রস্তাব পাঠান প্রশাসক।

বিধিমালায় কী থাকতে পারে

১৯৬১ সালের বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশ বাতিল করে ২০২২ সালে নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন প্রণয়ন করে সরকার। এ আইনের ভিত্তিতে নতুন বিধিমালা হচ্ছে। বিগত সরকারের সময় বিধিমালার খসড়া করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার সেই খসড়া সংযোজন-বিয়োজন করে চূড়ান্ত করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিধিমালাটি আইন মন্ত্রণালয়ে দুই দফা ভেটিং হয়েছে। প্রথমবার ভেটিংয়ের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু বিষয় সংযোজন করে। এরপর আরেক দফা ভেটিং হয়।

বিধিমালায় এফবিসিসিআইয়ের পাশাপাশি সব বাণিজ্য সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদে পরপর দুই মেয়াদ শেষে আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগে একবার বিরতির বিধান থাকতে পারে। সব বাণিজ্য সংগঠনের পর্ষদের মেয়াদ হবে দুই বছর।

এদিকে এফবিসিসিআইয়ের ৮০ জনের পর্ষদে ৩৪ জন মনোনীত পরিচালক রয়েছেন। নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৫ জন করে মোট ১০ জন মনোনীত পরিচালক থাকবেন। এর বাইরে নারী চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে একজন করে মোট দুজন মনোনীত পরিচালক পর্ষদে যুক্ত হবেন। বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে সভাপতি এবং চেম্বার গ্রুপ থেকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্বাচিত হবেন।

জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ফেডারেশনের সংস্কারের জন্য আন্দোলন করেছি। অবশেষে সেই সংস্কার হচ্ছে। তবে একটি গোষ্ঠী সুকৌশলে অনেক অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীকে নির্বাচনের বাইরে রাখার অপচেষ্টা করছে। দুইবার পর্ষদে থাকার পর একবার বিরতিতে আপত্তি নেই। তবে সেটি ভবিষ্যতের জন্য হতে হবে।’

অনিয়মের অভিযোগ

এফবিসিসিআইয়ের নিযুক্ত প্রশাসককে সহায়তার জন্য গত অক্টোবরে তিন সদস্যের সহায়ক কমিটি গঠিত হয়। ছয় সদস্যের সহায়ক কমিটিতে আছেন ফেডারেশনের সাবেক সহসভাপতি ও পরিচালকেরা।

জানা যায়, প্রতিটি চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঁচজন এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের সদস্য হন। তবে বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন নেতাদের পাঁচজনের মধ্যে দুজন সদস্য নিজেদের পছন্দের ব্যবসায়ীকে দিতে চাপ দিচ্ছেন সহায়ক কমিটির কেউ কেউ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠনের নেতা বলেন, কয়েক মাস আগে সংগঠনের চাঁদা দিতে ফেডারেশনে গেলে সহায়ক কমিটির একজন সদস্য ডেকে নিয়ে যান। তখন তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সেই ব্যক্তি অন্য একটি কক্ষে নিয়ে বলেন, ‘আমরা দল গোছাচ্ছি। তাই আপনার সংগঠন থেকে আমাদের দুজনকে সাধারণ পরিষদের সদস্য করতে হবে।’

এ বিষয়ে সহায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাশেম হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেডারেশনে অনেক অনিয়ম আছে। তাই আমরা যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন চাই।’

দ্রুতই নির্বাচনের তফসিল

জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমান গত মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংস্কারের জন্য সাধারণ সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া ১২টি সুপারিশ আমরা করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত কোনগুলো থাকছে, তা বিধিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পর পরিষ্কার হবে। অতীত ও ভবিষ্যৎ—উভয় ক্ষেত্রে পরপর দুইবার পর্ষদে থাকলে একবার বিরতি দেওয়ার বিষয়টি ১২ সুপারিশের মধ্যেই ছিল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *