হাওরাঞ্চলের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের দাবি, ১৬ দফা প্রস্তাব ঘোষণা

0
ijuiuij

সিলেটে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার আলোচনা সভা হয়। এতে মুখ্য আলোচকের বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভারমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতীয় বাজেটে হাওরাঞ্চলের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সংগঠন। এ সময় হাওর রক্ষায় ১৬ দফা প্রস্তাবও ঘোষণা করা হয়।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটায় সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ইমজা) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ‘জলবায়ু বাজেট ও বাংলাদেশের হাওর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে হাওরাঞ্চল রয়েছে বলে এ সময় উল্লেখ করা হয়।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কাসমির রেজা। অধ্যাপক আবুল ফতেহ ফাত্তাহর সভাপতিত্বে এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রজত সরকারের সঞ্চালনায় সভাটি হয়। এতে মুখ্য আলোচকের বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভারমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ।

বিশেষ আলোচকের বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা সুলতানা, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শাহাদাত চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসিনা বেগম, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক শহীদুল ইসলাম (সোহেল) ও কবি পুলিন রায়।

মূল প্রবন্ধে কাসমির রেজা ১৬ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। এতে হাওর এলাকার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দাবি করা হয়। অন্য দাবির মধ্যে হাওরাঞ্চলে মাছের প্রজননকালে মাছ ধরা বন্ধ রাখা এবং ওই সময় জেলেদের প্রণোদনা প্রদান, বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা কমাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য এ বছর বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দাবি, সুনামগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ আবহাওয়া অফিস স্থাপন, হাওরের বিদ্যালয়ের জন্য সরকারিভাবে নৌকা বরাদ্দ করা উল্লেখযোগ্য।

এ ছাড়া হাওরের গ্রামগুলোকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ, ফসল রক্ষা বাঁধের বিকল্প হিসেবে হাওরের নদী ও বিল ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা, স্বল্প জীবনের ধান আবিষ্কারের জন্য গবেষণা ও আবিষ্কৃত ধান কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে বাজেটে বরাদ্দ রাখা, হাওরের উন্মুক্ত জলাশয় লিজ দেওয়া বন্ধ করা এবং অভয়াশ্রমগুলো সংরক্ষণ করা, সরাসরি হাওরের প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে উপযুক্ত মূল্যে সরকারিভাবে অধিক হারে ধান কেনা, হাওরের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় টেকসই কর্মসূচি গ্রহণ করার দাবিও জানানো হয়।

মূল প্রবন্ধে কাসমির রেজা উড়াল সেতু, সীমান্ত সড়কসহ চলমান প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ নিশ্চিত করা, হাওরাঞ্চলে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সব হাওর উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য হাওর ভাতা চালু করা, হাওরে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, কৃষির পাশাপাশি শিল্প ও সেবা খাতের প্রসার ঘটানো, হাওরে বেকারত্ব রোধে বিকল্প কর্মসংস্থানের সৃষ্টি এবং পরিবেশবান্ধব ও কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। তিনি একই সঙ্গে হাওরের সব প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

সভায় বক্তারা বলেন, হাওর এলাকার কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে, যাতে শহরের জনসংখ্যার ওপর চাপ না বাড়ে। পরিবেশসম্মত পর্যটনকে আরও উৎসাহিত করতে হবে। উচ্চ আয়ের পরিবারের মানুষজন তাঁদের অতিরিক্ত ঘরে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এতে কমিউনিটিভিত্তিক ট্যুরিজমের ফলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন। তবে উন্নয়নের নামে যেন হাওরের ক্ষতি করা না হয়। পাশাপাশি হাওরের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ও গঠন করা উচিত বলে জানান তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *