সিলেটে পানি বাড়ায় সাদাপাথর বন্ধ ঘোষণা, ঝুঁকিপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র এড়িয়ে চলার পরামর্শ


পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সিলেটের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।সীমান্তের ওপারে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সিলেটে কয়েক দিন ধরেই নদ-নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। ওই পরিস্থিতিতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ সময় পানিকেন্দ্রিক ঝুঁকিপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া স্থিতিশীল হলেই পর্যটনকেন্দ্রটি খুলে দেওয়া হবে।
স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেহেতু নদীকেন্দ্রিক পর্যটনকেন্দ্রগুলো সিলেটে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। তাই বর্ষা মৌসুমই মূলত সিলেট বেড়ানোর উপযুক্ত সময়। তবে এবার মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর কিছু পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে, আবার অন্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এমন পরিস্থিতিতে পানিকেন্দ্রিক প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় মাঝিরা জানিয়েছেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র জাফলং জিরো পয়েন্টে কখনো স্রোতের তীব্রতা বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। তবে ভারত থেকে প্রবল বেগে পানি নেমে আসায় পানির গভীরতা বেড়েছে। এতে জাফলংয়ে ভ্রমণকেন্দ্রিক নৌ চলাচল প্রায় সময়ই মাঝিদের বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
গোয়াইনঘাটের ইউএনও রতন কুমার অধিকারী জানান, নদ-নদীতে প্রচুর পানি থাকলেও এখন জাফলংয়ে পানি স্থির ও শান্ত আছে। তাই এ পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করা হয়নি। মাঝিরা নিরাপদ মনে করলেই নৌ চলাচল শুরু করেন, নতুবা বন্ধ রাখেন।
এদিকে জেলার পানিকেন্দ্রিক পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাটের জলারবন রাতারগুল ও বিছনাকান্দি এবং জৈন্তাপুরের লালাখালে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। তবে কোনো পর্যটনকেন্দ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেনি স্থানীয় প্রশাসন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে পানিকেন্দ্রিক ঝুঁকিপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আগামী বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হবে পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটি। যেহেতু বর্ষা মৌসুমে সিলেট সবুজ, স্নিগ্ধ ও মায়াবী হয়ে ওঠে, তাই এ সময়ে অনেক পর্যটক সিলেটে বেড়াতে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছুটি শুরু হওয়ার আগে অতিবৃষ্টি ও ঢল কমে গেলে নদ-নদীর পানিও অনেকেটাই কমে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক আবদুর রহমান রিপন বলেন, ভারী বৃষ্টিসহ নানা কারণে এবারের ঈদের কেনাকাটায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে পর্যটনকেন্দ্রিক স্থানগুলোতে পানি আসায় ঈদের ছুটিতে পর্যটক আসবেন কি না, এ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হোটেল, রিসোর্ট বুকিংয়ের হারও অনেক কম। তবে পানি নেমে গেলে দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এ সময়ে পর্যটনবাহী নৌকা চড়া ও পানিতে নামার সময় পর্যটকদের লাইফ জ্যাকেট পরতে হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, সাদাপাথর ছাড়া কোনো পর্যটনকেন্দ্রই বন্ধ করা হয়নি। স্রোতের তীব্রতা থাকলে মাঝিরা নিজ উদ্যোগেই পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে বেড়ানোর নৌ চলাচল বন্ধ রাখেন। তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার সময় যেহেতু আরও বাকি আছে, তাই এ সময়ে পানি বাড়ার হার দেখে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত অবহিত করা হবে।