প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ২১, ২০২৫, ১১:৩২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ২০, ২০২৫, ৩:৩৮ এ.এম
বিটিএস সদস্যরা সামরিক জীবনে কে কী করেছেন

বিটিএস সদস্যরা যখন বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণে যাওয়ার ঘোষণা দেন, তখন তা শুধু দক্ষিণ কোরিয়া নয়—বিশ্বজুড়ে তাঁদের ভক্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল। ২০২২ সালে ব্যান্ডের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। প্রিয় ব্যান্ডের এমন সিদ্ধান্তে অনেকে কষ্ট পেয়েছিলেন, অনেকে আবার গর্বিত ছিলেন। তবে বিটিএস সদস্যরা সব সময় জানিয়ে এসেছেন, বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়া তাঁদের দায়িত্ব, তাঁরা সেটা গর্বের সঙ্গে পালন করবেন। বিটিএসের সাত সদস্যদের মধ্যে ছয়জনই বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা শেষে একে একে ফিরে এসেছেন বেসামরিক জীবনে। সামরিক শৃঙ্খলার ঘেরাটোপে থেকেও তাঁরা কখনো কখনো ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। চিঠি কিংবা লাইভে এসে নিজেদের গল্প শুনিয়ে তাঁরা জানান দিয়েছেন, কেমন আছেন। একে একে শোনা যাক তাঁদের গল্পগুলো।
‘ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো ভুলে গিয়েছি’
২০২২ সালের ডিসেম্বরে জিন সবার প্রথমে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ছিলেন ৫ম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের রিক্রুট ট্রেনিং সেন্টারের সহকারী ড্রিল প্রশিক্ষক। এই ইউনিটেই পরে জিমিন ও জংকুক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সেনা ইউনিটের ভেতরে জিনের দায়িত্বশীলতা ও নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়। ভক্তদের উদ্দেশে তিনি মাঝেমধ্যে হাতে লেখা চিঠি বা উইভার্সে বার্তা পাঠিয়েছেন। ২০২৪ সালের ১২ জুন দায়িত্ব থেকে ফেরার পর লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে এখন খুব অদ্ভুত লাগছে। মনে হচ্ছে, প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম।’ প্রশিক্ষণ থেকে ফেরার পরদিনই তিনি ‘বিটিএস ফিস্টা ২০২৪’–এর মঞ্চে এসে ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেন, অনেককে জড়িয়ে ধরেন। এটি ছিল ভক্তদের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত!
জে-হোপের আত্মশুদ্ধির যাত্রা
জে-হোপ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে। তিনি ছিলেন ৩৬তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের সক্রিয় সৈনিক। যদিও তিনি প্রকাশ্যে খুব বেশি কিছু বলেননি। তবে মাঝেমধ্যে উইভার্সে পোস্ট করে বা ছুটিতে লাইভে এসে তাঁর দিনগুলো সম্পর্কে বলেছেন। তিনি জানান, সময়টা শারীরিক ও মানসিকভাবে কষ্টকর হলেও তিনি এটিকে দেখেছেন আত্মশুদ্ধি ও নিজেকে গঠনের সময় হিসেবে। জে-হোপ বলেন, ‘সহনশীলতা, ধৈর্য আর দায়িত্বশীলতা—এই তিন জিনিস আমি গভীরভাবে শিখেছি।’
আরএমের দীর্ঘ রাতগুলো
সেনাজীবন শেষ করে বের হওয়ার সময় আরএম যখন স্যাক্সোফোন বাজাচ্ছিলেন, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, তাঁর পথটা বোধ হয় খুব মসৃণ ছিল। তবে বিষয়টা মোটেও সে রকম নয়। আরএম দায়িত্ব পালন করেছেন ১৫তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের মিলিটারি ব্যান্ডে। সেখানেই তিনি স্যাক্সোফোন বাজানো শেখেন। সেনাজীবনের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল, আমি আবার সেই ১৭ বছর বয়সী শিক্ষানবিশ একজন হয়ে গেছি।’
লাইভে এসে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন আরএমভিডিও থেকে
লাইভে এসে তিনি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। তিনি জানান, হাইব বনাম এডোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিন হি-জিন বিতর্ক তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। সে সময় তাঁর ঘুমের সমস্যাও দেখা দেয়। ‘একবার টানা ৭৮ ঘণ্টা ঘুমাতে পারিনি’, বলেন আরএম। এ সমস্যা কাটাতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় তাঁকে।
ভির রোলার-কোস্টার রাইড
বিটিএসের অন্যতম জনপ্রিয় সদস্য ভি। তিনি দায়িত্বপালন করেন রিপাবলিক অব কোরিয়া আর্মির স্পেশাল ডিউটি টিমে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি জানান, তাঁর ওজন ছিল ৬২ কেজি। তাঁর লক্ষ্য ছিল ৮৬ কেজি হওয়া। তিনি শারীরিক শক্তি ও পেশি বাড়ানোর জন্য সেনাজীবনে ৮০ কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়িয়েছিলেন। এক লাইভে ভি বলেন, ‘আমি গকবাপ (উঁচু ঢিবির মতো হয়ে থাকা এক থালা ভাত) খেতাম, সপ্তাহে ছয় দিন ব্যায়াম করতাম। এর ফলে আমি অনেক স্বাস্থ্যবান হয়েছি।’
ভি তিনি দায়িত্বপালন করেন রিপাবলিক অব কোরিয়া আর্মির স্পেশাল ডিউটি টিমেভিডিও থেকে
সেনাবাহিনী থেকে ফেরার পর নিজের স্বাস্থ্যের ভারসাম্য রক্ষা করতে তিনি আবার ওজন কমান। ওজন কমিয়ে তিনি ৬৭ কেজিতে নিয়ে আসেন।
ভি জানান, সেনাবাহিনীতে থাকাকালে কঠিন দিনগুলো তাঁর ব্যক্তিত্বের ধরনেও পরিবর্তন আনে। তিনি আগে ছিলেন এফ টাইপ, মানে আবেগভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ব্যক্তি। এখন তিনি হয়ে গেছেন টি, অর্থাৎ যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত নেওয়া মানুষ। তিনি বলেন, ‘আবেগ নয়, এখন যুক্তিই আগে।’
ভাইরাল রাঁধুনি জংকুক
ভি যখন গকবাপ খাচ্ছিলেন, সেখানে রান্নাঘরে দক্ষতা দেখাচ্ছিলেন জংকুক। তাঁর নুডলস রেসিপি ইতিমধ্যেই ভাইরাল।
তিনি বলেন, ‘কোরিয়ার প্রায় সব খাবারই এখন রান্না করতে পারি।’ তবে সেনাবাহিনীতে রান্না করতে হয় অনেক বেশি পরিমাণে, যা বাড়ির রান্না থেকে একদম আলাদা।
সবার সেরা জিমিন
জিমিন প্রশিক্ষণের প্রথম থেকেই সবার সেরা ছিলেন। পাঁচ সপ্তাহের মৌলিক প্রশিক্ষণে তিনি ক্লাসের সেরা হন। প্রশিক্ষণ সমাপ্তির অনুষ্ঠানে সৈনিকদের পক্ষে শপথ পাঠ করেন। নিজের অভিজ্ঞতা তিনি জানান এভাবে, ‘আমি এতটাই সৈনিক হয়ে উঠেছিলাম যে ভুলেই গেছি, আমি একজন শিল্পী।’ সময় যেন থমকে গিয়েছিল তাঁর কাছে। জিমিনের ভাষ্যে, ‘এক সপ্তাহ মনে হতো এক মাস।’
জংকুক ও জিমিনের নতুন বন্ধুত্ব!
জংকুক ও জিমিন একসঙ্গে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, রিপাবলিক অব কোরিয়া আর্মির পঞ্চম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনে। জংকুক ও জিনিন একসঙ্গে থাকায় তাঁদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হয়। এ প্রসঙ্গে জংকুক বলেন, তাঁরা অনেক রাত ঘুমাতে পারেননি। সে সময় তিনি ও জিমিন বিটিএসের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করেছেন।
সুগার অপেক্ষায় সবাই
বিটিএসের সদস্যরা একে একে ফিরে এসেছেন সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে, বাকি শুধু সুগা। তাঁর সামরিক সেবার কাজ শেষ হবে ২১ জুন। আঘাতের কারণে তিনি সেনাবাহিনীতে না গিয়ে সমাজসেবা কর্মী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। তাঁর দায়িত্ব বা অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে বিটিএস আর্মিরা অপেক্ষা করছেন তাঁর দলে ফিরে আসার। তারপর সবাই মিলে কবে আবার মঞ্চে ঝড় তোলেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় ভক্তরা। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। তবে ভক্তদের ধারণা, ২০২৫ সালের শেষ দিকে বিটিএস আবার পুরো দল হিসেবে মঞ্চে ফিরতে পারে।
তথ্যসূত্র: কোরিয়া জুনগ্যাংক ডেইলি
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এডভোকেট হায়দার , প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জাতিসংঘ (U.N ) তালিকাভূক্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা কম্বাইন্ড ল রাইটস ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন ।
প্রধান কার্যালয় : গাজীপুর জজকোর্ট সংলগ্ন এফ ১০২/১৫ হাক্কানী হাউজিং সোসাইটি,গাজীপুর, ঢাকা। মোবাইল নম্বর : 01701 331047
www.gormilnews.com