ভিক্ষুক থেকে ৩১ বছর বয়সে হলেন চিকিৎসক


ছোটবেলায় সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হন লি চুয়াঙ্গি। এতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি, কথা বলা ও শেখা এবং পেশি নড়াচড়ার সমস্যাসহ নানা অসুবিধা দেখা যায়। কঠিন এই রোগের সঙ্গে ১৬ বছর পর্যন্ত লড়াই চলে তাঁর। এরপর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ২৫ বছর বয়সে ভর্তি হন মেডিকেল কলেজে। শারীরিক অক্ষমতা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। কঠিন অধ্যবসায় দিয়ে স্বপ্নকে জয় করেন। দীর্ঘ লড়াই–সংগ্রাম শেষে চিকিৎসক হন। তাঁর বয়স এখন ৩৭ বছর।
চীনের ইউনান প্রদেশে নিজেই একটি ছোট ক্লিনিক চালু করেছেন।
এক বছর বয়সে লি সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হন। মা–বাবা তাঁর চিকিৎসার পেছনে পরিবারের সব সঞ্চয় ব্যয় করেন। ৯ বছর বয়সে একটি অস্ত্রোপচার ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে চান না। তিনি চাকরি খোঁজার চেষ্টা করেন। এক ব্যক্তি তাঁকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য ছিল খারাপ। তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়াতে বাধ্য করেন। এরপর উপার্জিত অর্থ নিজে নিয়ে নেন।
৯ থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত ওই ব্যক্তি লি–কে সড়কে ভিক্ষা করতে বাধ্য করেন। বিনিময়ে প্রতি মাসে মাত্র ১০০ ইউয়ান কপালে জোটে তাঁর। তবে ১৬ বছর বয়সে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কারণ, ওই ব্যক্তি মনে করেছিলেন, লি বড় হয়ে যাওয়ায় তিনি মানুষের সহানুভূতি আদায় করতে পারবেন না।
একদিন লি বুঝতে পারেন, তিনি সম্পূর্ণ নিরক্ষর। পত্রিকাও পড়তে পারেন না। তখনই সিদ্ধান্ত নেন, লেখাপড়া করে জীবনে পরিবর্তন আনবেন। এরপর লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০১৩ সালে ২৫ বছর বয়সে একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। একনিষ্ঠতার সঙ্গে পড়াশোনা করে ২০১৬ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রতি নিবেদিত লি নিজেকে সেরিব্রাল পালসির একটি কেস স্টাডি হিসেবে সহপাঠীদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেন। ২০১৯ সালে ৩১ বছর বয়সে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর লি একটি মেডিকেল কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। তবে কয়েক মাস পর তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও লি হেনান প্রদেশের একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পান। পাশাপাশি মেডিকেলে নিবন্ধন পেতে পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
লি বলেন, তিনি বড় কোনো হাসপাতালে কাজ করার আশা করেন না। তবে একটি ছোট ক্লিনিকে প্রতিবেশীদের সেবা দিতে পেরে তিনি খুশি। এরপর তিনি ইউনান প্রদেশে চলে যান এবং সেখানে নিজের একটি ক্লিনিক চালু করেন।